ব্লাইন্ড জোন-সাবধানে থাকুন

"ব্লাইন্ড জোন - মৃত্যুর হাতছানি " সড়ক পথে সাইকেল কিংবা মটর সাইকেল যারা রাইড করি তাদের অবশ্যই উচিত "ব্লাইন্ড জোন" সম্পর্কে ধারনা নিয়ে রাস্তায় রাইড করা প্রয়োজন। গতকাল একটি মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি এর একজন শিক্ষার্থী। নিহত শিক্ষার্থীর আত্নার মাগফিরাত কামনা করছি। গতকালের সড়ক দূর্ঘটনা দেখে একটি জিনিস খুব ভালো ভাবেই উপলব্ধি হচ্ছে ঢাকায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাইক/ সাইকেলে এক্সিডেন্ট হয় " ব্লাইন্ড জোন " এ থাকা বাহন গুলো। ব্লাইন্ড জোন কি বা কোনটা? পরিষ্কার বাংলায় যা বুঝি আমি ব্লাইন্ড জোন সম্পর্কে সেটি হলো , " চালকের আসনে বসার পর যে অংশটি লুকিং গ্লাস এ দেখা যায়না এবং যে অংশগুলো চালকের আসন থেকে সরাসরি চোখে দেখা যায় না সেটাকেই "ব্লাইন্ড জোন" বলে। সংযুক্ত ১ম ছবিটা ভালো করে লক্ষ্য করুন, দেখবেন চলন্ত অবস্থায় একটি ট্রাকের বাম কোনে (ব্লাইন্ড জোনের রিস্কি জোন) রয়েছে স্কুটি (সাদা) চালক। চালকের আসন থেকে ট্রাকের সামনের অংশের মূল বডিটি প্রায় এক/দেড় ফিট হয় বা আরো বেশি হয়, আর সেই সামনের অংশ যদি চালকের বাম দিকে (যেখানে চালকের সহকারী বসে তার কোনা বা নিচের অংশ ) হয় তাহলে সেটাকে হিসেব করলে দেখা যায় আনুমানিক ৫/৬ ফিট দুরত্ব বা আরো বেশি দুরত্ব হবে চালকের চোখ থেকে। এরকম একটি দুরত্ব এর সাথে যদি চালকের বসার স্থানের হাইটের সাথে রাস্তার হাইট হিসেব করি তাহলে সেখানেও প্রায় ৩/৪ ফিট থাকবে দূরত্ব মাটির থেকে চালকের আসনের। যে কোন যানবাহন যত উপর থেকে দেখবেন ততই ছোট লাগবে দেখতে৷ সেই অনুযায়ী চালকের আসনের থেকে উপরক্ত আনুমানিক দূরত্বের হিসেবে যদি চিন্তা করেন তাহলে ৫/৬ ফিটের সাইজের সাইকেল ৩/৪ ফিট এর মত লাগবে যদি দেখতে পান, কিন্তু ট্রাক এর মত এত বিশাল বডির মধ্যে থেকে চালক সরাসরি ওই গ্যাপটি দেখতে পায়না, যে কারণে একজন হেল্পার থাকে প্রতিটা ট্রাক ড্রাইভের সাথে সাধারণত। হেল্পার যদি অসতর্ক অবস্থায় থাকে কিংবা, হেল্পার যদি না থাকে তাহলে ড্রাইভের সাথে তাহলে পুরোপুরি ঝুকিপূর্ণ থাকে ওই জোনটি। CCTV ফুটেজ দেখে বোঝা যাচ্ছিলো রাইডার ট্রাকের বাম পাশ দিয়ে ওভারটেক করার জন্য এগিয়ে যাচ্ছিলো, ১ম ছবি খেয়াল করলে দেখতে পাবেন রাইডার পুরোপুরি ব্লাইন্ড জোনে আসার পর পর ট্রাক ধাক্কা দেয় পিছন থেকে, ২য় ছবিটিতে খেয়াল করলে দেখতে পাবেন ১ম চাকার পর পর রাইডারের উপর দিয়ে পিছনে চাকা টাও যাবার মুহুর্তে হেল্পার বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে, সে পিছে তাকিয়ে দেখে কেউ তার ট্রাকের পিছের চাকার নিচে পরছে, তাৎক্ষনিক মূল ড্রাইভার ব্রেক করেছিলো ট্রাক কিন্তু শেষ মেশ পালিয়ে যায় অবস্থা বুঝতে পেরে। CCTV ফুটেজ অনুযায়ী রাইডার ট্রাকের বাম পাশ ধরে ফ্লাইওভার থেকে নামছিলো, একটি বাক আসার সাথে সাথে ব্লাইন্ড জোনে চলে আসার রাইডার কে ধাক্কা দেয় পড়ে পিছন থেকে। চালকের থেকেও এখানে সবচেয়ে বেশি দায়ী যদি কেউ থাকে সে হলো হেল্পার, এই জোন টা দেখার জন্যই মূলত হেল্পার থাকে, এরপর চালক। হেল্পারের অসতর্কতার জন্যই মূলত এই ধরনের এক্সিডেন্ট হয়৷ সকল দুই চাকা বাহনের রাইডারদের একান্ত্যই অনুরোধ থাকবে একটু পড়াশুনা করে রাস্তায় বের হলে এই ধরনের দূর্ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে, আমিও নিজেও দুই চাকা নিয়ে রাস্তায় বের হই আমি নিজেও জানি অনেক সময় অজান্তেই ব্লাইন্ড জোনে ঢুকে পরতে হয়। রাস্তার বড় বড় বাস/ ট্রাকের কাছে আমাদের বাহনটি নিতান্তই ক্ষুদ্র একটি বাহন, আর সেই বাহনের ব্লাইন্ড জোন গুলো থেকে যতটা এডিয়ে রাস্তায় চলা যায় সে চেষ্টাই রাখতে হবে আমাদের। খুবই রিস্কি জোনে চলে গেছেন বুঝতে পারলে হর্ণ দিন নতুবা শাউট করুন, চালক/ হেল্পারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করুন। ফ্লাইওভারের ঢালে নামার সময় যে কোন গাড়ি ওভারটেক করার সময়ে দুই গাড়িমাঝে, একদম বাম/ডান পাশ ঘেঁষে ওভারটেক করার সময় অবশ্যই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবেন, প্রয়োজনে এরকম রিস্কি ওভারটেক থেকে বিরত থাকুন। রাস্তায় রাইডের সময় নিজের সেফটি সম্পূর্ণ নিজের কাছেই থাকে, বাকিটা আল্লাহ ভরসা। নিজের সর্বোচ্চ সেফটি মেইন্টেন করে আমাদের দেশের রাস্তায় চলা উচিত। উপরের লেখার মাধ্যমে চেষ্টা করেছি আপনাদের সতর্ক করবার জন্য এবং বুঝানোর জন্য। নিজে সাবধানে থাকুন এবং অন্যদেরকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দিন।

Comments

Popular posts from this blog

Goat Farming in Bangladesh || বাংলাদেশে ছাগল পালন ।। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন || Black Bengal Goat Farming

পাহাড়ের টানে খাগড়াছড়ি-সাজেক || সাজেক ভ্রমণের বৃত্তান্ত