মধু
মধু ঘন, বর্ণে সোনালী, খেতেও বেশ সুস্বাদু, খেলে শক্তি পাওয়া যায়, ক্ষতে লাগালে তা দ্রুত নিরাময় হয়।
"এরপরে আমি ঈশ্বরের দেয়া খাদ্যের কাছে এলাম, এটা সেই স্বর্গীয় উপহার মধু " এটা রোমান কবি ভার্জিলের Georgics এর একটা লাইন।মধু ছিলো প্রাচীন মানুষের প্রথম এবং প্রধান ডেলিকাসি। সবচেয়ে আদিম সুখাদ্য।
প্রাচীনকালে মধুকে মনে করা হতো প্রকৃতির অলৌকিক দান। গ্রীক ধর্মে, জিউস এবং অলিম্পাসের বারো দেবতার খাদ্য ছিল অমৃত।
হিন্দু ধর্মে, মধু জীবনের পাঁচটি অমৃতের মধ্যে একটি। মন্দিরে, মধু অভিষেক নামক একটি রীতিতে দেবতাদের উপর মধু ঢেলে দেওয়া হয়।
গ্রেকো ল্যাটিন ট্র্যাডিশনে মধুকে স্বর্গীয় খাদ্যের মর্যাদা দেয়া হয়েছে।
আমাদের ইসলাম ধর্মেও মধুকে দেয়া হয়েছে অনন্য মর্যাদা। পবিত্র কোরআনে মধুর জন্য একটি স্বতন্ত্র সূরা আছে "নাহল"!! নাহল শব্দটির অর্থ মৌমাছি।
সূরা নাহলে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন- “ইয়াখরুজু মিমবুতুনিহা শারাবুম মুখতা লিফুন আল্ওয়া নহু ফীহি শিফাউল লিন্নাসি।” যার অর্থ : তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। মধু হচ্ছে ওষুধ এবং খাদ্য উভয়ই। সূরা মুহাম্মদ- এর ১৫ আয়াতে আল্লাহ তায়ালার এরশাদ হচ্ছে- “জান্নাতে স্বচ্ছ মধুর নহর প্রবাহিত হবে।”
মধুকে বলা হয় খোদায়ী চিকিৎসার মহা উপাদান।
আয়ুর্বেদে বলা হচ্ছে - হে অশ্বিন, উজ্জ্বলতার প্রভু, আমাকে মৌমাছির মধু দিয়ে অভিষিক্ত করুন, যাতে আমি পুরুষদের মধ্যে জোরালো বক্তব্য দিতে পারি!
প্রায় ৫০ মিলিয়ন বছর আগের ফসিলে আদিম মৌমাছির ফসিল পাওয়া গেছে তবে আজকের যে মৌমাছি আমাদের মধু দেয় সেই মৌমাচির চাইতে সেই ফসিলের মৌমাছির আকার ছিলো ভিন্ন।
ফসিলের মৌমাছির নাম Electrapis বা পীতাভ মৌমাছি। আজকের দিনের মৌমাছি Apis mellifera র জন্ম এশিয়ায়, এশিয়া থেকেই সেই মৌমাছি মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে পৌছে। মধু আহরণ নিয়ে সবচেয়ে প্রাচীন চিত্রকর্ম পাওয়া গেছে ভারতের মধ্য প্রদেশে পাঁচমারি পাহাড়ে পাথরের উপরে আঁকা মধু সংগ্রাহের দৃশ্য। ছবিটা আঁকা হয়েছিলো নিওলিথক পিরিয়ডে।
স্পেনের ভ্যালেন্সিয়াতেও মধু সংগ্রহের রক পেইন্টিং পাওয়া গেছে। এর পরে পাওয়া গেছে সাউথ আফ্রিকাতে মোজাম্বিকে। তবে সেগুলো ভারতের রক পেইন্টিং এর চাইতে বয়সে নবীন।
মধু তৈরি হয় আহরিত ফুলের সুধা থেকে। নেকটারের বাংলা সুধা। অবশ্য মধু ও সুধা বাংলার ভাব দর্শনের দুই আধ্যাত্মিক পরিভাষা।
ক্লদ লেভি স্ট্রস ও মধু আর তামাকের মিথ নিয়ে গবেষণা করে লিখেছেন- From Honey to Ashes: Introduction to a Science of mathology.
সেখানে মধু থেকে তৈরি মদ মিডের উৎপত্তি নিয়ে একটা দারুণ গল্প তিনি বলেছেন, কীভাবে এক বৃদ্ধ মানুষ মধু গেজিয়ে মদ তৈরি করেছিলো।
মধু ধর্ম দর্শন আর মানুষের সভ্যতার সাথে এভাবেই মিশে আছে আর মিশে থাকবে মানুষ যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন।
Comments
Post a Comment