বিলাইদের প্রেম কাহিনী
মেয়েটার সাথে প্রথমে আমার ইনবক্সে কথা হতো ওর বিড়াল লায়লীকে নিয়ে। লায়লী কি খায়?কোথায় থাকতে পছন্দ করে?ওর বাসায় লায়লী কাকে কাকে পছন্দ করে?কখন ঘুমায়? কখন হাগে!? এইসব নিয়ে। আস্তে আস্তে আমাদের মধ্যে ইনবক্সে কথার পরিমাণ বেড়ে গেলো। কিন্তু একটা জিনিস খেয়াল করলাম এই মেয়ে তার বিড়াল ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে কথা বলে না। কয়দিন কথা বলার পরে আর কোনো কথা খুঁজে পেলাম না বলে এক বন্ধুর সাহায্য নিয়ে আমিও এক বিড়াল পালতে শুরু করলাম। ওর নাম দিলাম মজনু।
তারপর সারাদিন ওকে বিড়ালের লালন পালন বিষয়ক নানা কথাবার্তা নিয়ে নক দিতে থাকলাম। মজনুকে কখন গোসল করাবো? কখন খেতে দিবো?কি কি খাওয়াবো?কোনো অসুখ হলে কি কি পদক্ষেপ নিবো? কৃমির ওষুধ দিনে খাওয়াবো না রাতে খাওয়াবো? এইসব নিয়েই সারাদিন কেটে যেতো।
কিছুদিন পরে দেখলাম মেয়েটির বিড়াল লাইলীর নামে ফেসবুকে একটা একাউন্ট আছে। ফলোয়ার সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার ছুঁই ছুঁই করছে। বুঝে গেলাম আমার মজনুর একটা ফেসবুক একাউন্ট জরুরী। সাথে সাথেই মজনুর নামে একটা ফেসবুক একাউন্ট খুলেই আগে লায়লী কে রিকুয়েষ্ট পাঠালাম। ৫ মিনিট পরে রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করলো লায়লী। তারপর তার সেই একাউন্ট থেকে নিয়মিত লাইলীর সাথে মজনুর কথা হতে লাগলো।
এর মধ্যে একদিন লাইলী জানালো পাশের বাসার আবুল নামে এক লোকের বিড়াল কুদ্দুস ওর পিছে ঘুরঘুর করে। এই কথা শুনেই মজনুর মাথায় হাত। বলে কি লায়লী?! পরেরদিন সকালে এলাকার ভাই ব্রাদার্সদের যত বিড়াল আছে সব নিয়ে লায়লীর বাসার দিকে মজনুকে পাঠায় দিলাম। এদিকে মজনুর ফাইটিং দেখে লায়লী তার প্রেমে পড়ে গেলো। সেদিন রাতেই সে মজনুর ইনবক্সে মেসেজ দিলো। মজনু আমি তোমার প্রেমে পড়েছি। প্লিজ আমাকে তুমি ফিরিয়ে দিও না।
ঠিক সেদিন মনে হইলো। যাক মাছ এবার টোপ গিলছে। মজনু রাজি হবে না ওর বাপ পর্যন্ত রাজি। তারপর থেকে নিয়মিত মজনুর সাথে লায়লীর দেখা হতে লাগলো। ওরা গাছের চিপায়,টেবিলের নিচে নিজেদের মধ্যে খেলাধুলা করে আর এদিকে সানজানার সাথে আমার বসে থেকে ওদের পাহারা দিতে হয়। এদের দুজন কে ছেড়ে দিয়ে আমরা ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলি। না না আমাদের বিষয়ে না। লায়লী আর মজনুর ফিউচার বিষয়ে। ওরা কবে বিয়ে করবে? কবে বাচ্চাকাচ্চা হবে।?কি ধরনের বিড়ালের সাথে ওদের মিশতে দেওয়া যাবে না?বাচ্চা হলে কোন হাসপাতালের নিতে হবে?গর্ভকালীন সময় লাইলীর কিকি করা উচিৎ।কী কী খেতে দিতে হবে? কী খাওয়ালে বাচ্চার মেধা ভালো বিকাশিত হবে! ওদের কিভাবে মানুষ করতে হবে!এইসবই ছিল আমাদের গল্পের মূল বিষয়। কিছুদিনের মধ্যেই বুঝে গেলাম এই মেয়ের জীবনে বিড়াল ছাড়া আর কিছু নাই। তার সব কিছুর মধ্যে বিড়াল থাকা চাই ই চাই।
ঠিক করলাম ফেসবুক ফোন সব অফ করে রাখবো। এই মেয়ের সাথে আর কোনো যোগাযোগ করবো না। সাত দিন পরে দেখি সানজানা তার বিড়াল লাইলী সহ আমার বাসায় এসে উপস্থিত। আমার বিড়াল মজনু এতদিন কেন তার বিড়াল লায়লীর সাথে যোগাযোগ করে নাই। এইটা নিয়ে সে সবার সামনে ঝগড়া করা শুরু করলো। এবং সে প্রস্তাব দিলো। যেহেতু লায়লী মজনুকে ছাড়া থাকতে পারছেনা তাই তাদের বিয়ে দেওয়া উচিৎ। সেই সাথে তাদের মালিকদের ওর দুজনার বিয়ে করা উচিৎ। নাহলে তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে যাবে। মনে মনে ভেবে দেখলাম। যাক এইবার কাজ হয়েছে। যার জন্য এতকিছু ফাইনালি তাকে পেয়ে যাচ্ছি।
বাসর রাতে বসে আছি। আমার সামনে সানজানা। পাশে লায়লী আর মজনু। আজ আমাদের সবার বাসর রাত। আমি সানজানাকে বললাম ওদের আলাদা রুমে দিয়ে আসি। প্রাইভেসি বলে একটা বস্তু আছে। আমাকে অবাক করে দিয়ে সানজানা বললো, দেখো রিফাত। আমি তোমাকে বিয়ে করেছি শুধুমাত্র মজনুর জন্য। তুমি যদি ভেবে নেও এর বদলে তুমি আমাকে পাবে তাহলে তুমি ভুল করছ।এই কথা শুনে আমার মাথায় হাত। এই মেয়ের জন্য এতকিছু করলাম। আর শেষে এই মেয়ে বলে কিনা মজনুর জন্য আমাকে বিয়ে করেছে।
পাঁচ বছর পরের ঘটনা....
আজ লায়লী মজনুর ফ্যামিলি তে সদস্য সংখ্যা ১২। আর আমার ফ্যামিলিতে বাসর রাত থেকে যেই দুইজন ছিলাম। সেই দুইজন ই আছি। আশেপাশে বন্ধুবান্ধব এই নিয়ে অনেক হাসাহাসি করে। কিন্তু কিছু করার নেই। এটাই মনে হয় কপালে লিখা ছিল। সারাদিন লায়লী মজনুর ফ্যামিলির সেবাযত্ন করতে করতে সময় চলে যায়। প্রতিদিন ওদের সবার ছবি তুলে ওদের ব্যক্তিগত একাউন্টে পোস্ট দিতে হয়। ক্যাপশন লিখতে হয়। ওদের মধ্যে নিরাপদ সম্পর্ক নিশ্চিত করতে হয়। সানজানার কথা অনুযায়ী, ওদের একটা ভবিষ্যৎ আছে। সেটা তো আমাদের ই দেখতে হবে। তাইনা?
না, আমি সবকিছু রেখে পালিয়ে এসেছি। নতুন একটা বাসায় উঠেছি। এখানে নিরিবিলি বাকি জীবন কাটিয়ে দিবো ভেবেছি। কিন্তু আজ বিকেলে ছাদে গিয়ে দেখলাম বাড়িওয়ালার সুন্দরী একটা মেয়ে আছে। তার সাদা ধবধবে একটা কুকুর আছে। যার নাম জুলিয়েট। রুমে এসে অনলাইনে একটা কুকুর অর্ডার দিলাম। ভেবেছি এর নাম রাখবো রোমিও।
লায়লী মজনুর প্রেম কথা
রিফাত আহমেদ
সংগৃহীত পোস্ট।
Comments
Post a Comment