উট

"উটের দিকে তাকিয়ে দেখেছ, কীভাবে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে?” (সূরা গাশিয়াহ ১৭) উট প্রকৃতির এক মহাবিস্ময়, এটি ৫৩ ডিগ্রি গরম এবং মাইনাস-১ ডিগ্রি শীতেও টিকে থাকে। মরুভূমির উত্তপ্ত বালুর উপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা পা ফেলে রাখে। কোনো পানি পান না করে মাসের পর মাস চলে। মরুভূমির বড় বড় কাঁটাসহ ক্যাকটাস খেয়ে ফেলে। দেড়শ কেজি ওজন পিঠে নিয়ে শত মাইল হেঁটে পার হয়। উটের মত এত অসাধারণ ডিজাইনের প্রাণী প্রাণীবিজ্ঞানীদের কাছে এক মহাবিস্ময়। মানুষসহ বেশিরভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণীর দেহের তাপমাত্রা সাধারণত ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এর আশেপাশে থাকে। যদি দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বেড়ে ৩৮.৫ ডিগ্রির (১০২ ফা) বেশি হয়ে যায়, তখন অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর ক্ষতি হতে থাকে। ৪০ ডিগ্রির (১০৪ ফা) বেশি হয়ে গেলে লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক, খাদ্যতন্ত্র ব্যাপক ক্ষতি হয়। ৪১ ডিগ্রি (১০৫ ফা) তাপমাত্রায় শরীরের কোষ মরে যেতে শুরু করে। একারণেই যখন স্তন্যপায়ী প্রাণীদের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেড়ে যায়, তখন শরীর ঘেমে বাড়তি তাপ বের করে দিয়ে ঠাণ্ডা হয়ে যায়। কিন্তু উটের জন্য এভাবে পানি অপচয় করা বিলাসিতা। কারণ মরুভূমিতে সবচেয়ে দুর্লভ সম্পদ হচ্ছে পানি। একারণে উটের শরীরে এক বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। ভোরবেলা এর শরীরের তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি থাকে। তারপর আবহাওয়া যখন প্রচণ্ড গরম হয়ে যায়, তখন অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বেড়ে ৪১ ডিগ্রি (১০৪ ফা) পর্যন্ত ওঠে। এর পর থেকে এটি ঘামা শুরু করে। এর আগে পর্যন্ত এটি পানি ধরে রাখে। এভাবে প্রতিদিন উট স্বাভাবিক তাপমাত্রা থেকে প্রচণ্ড জ্বরের তাপমাত্রা পর্যন্ত সহ্য করে। এর শরীরের ভেতরে ব্যবস্থা রাখা আছে, যেন তা দিনের পর দিন ভীষণ জ্বর সহ্য করার পরেও অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর বড় ধরনের ক্ষতি না হয়। উটের রক্ত বিশেষভাবে তৈরি প্রচুর পরিমাণে পানি ধরে রাখার জন্য। উট যখন একবার পানি পান করা শুরু করে, তখন এটি প্রায় ১৩০ লিটার পানি, প্রায় তিনটি গাড়ির ফুয়েল ট্যাঙ্কের সমান পানি, ১০ মিনিটের মধ্যে পান করে ফেলতে পারে। এই বিপুল পরিমাণের পানি অন্য কোনো প্রাণী পান করলে রক্তে মাত্রাতিরিক্ত পানি গিয়ে অভিস্রবণ চাপের কারণে রক্তের কোষ ফুলে ফেঁপে ফেটে যেত। কিন্তু উটের রক্তের কোষে এক বিশেষ আবরণ আছে, যা অনেক বেশি চাপ সহ্য করতে পারে। এই বিশেষ রক্তের কারণেই উটের পক্ষে একবারে এত পানি পান করা সম্ভব হয়। উটের কুজ হচ্ছে চর্বির আধার। চর্বি উটকে শক্তি এবং পুষ্টি যোগায়। আর পানি শরীরের যাবতীয় আভ্যন্তরীণ কাজকর্ম সচল রাখে, শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখে। একবার যথেষ্ট খাবার এবং পানি নেওয়ার পর একটি উট ছয় মাস পর্যন্ত কোনো খাবার বা পানি পান না করে টিকে থাকতে পারে। উট হচ্ছে মরুভূমির জাহাজ। এটি ১৭০-২৭০ কেজি পর্যন্ত ভর নিয়েও হাসিমুখে চলাফেরা করে। এই বিশাল, শক্তিশালী প্রাণীটির মানুষের প্রতি শান্ত, অনুগত হওয়ার কোনোই কারণ ছিল না। বরং এরকম স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রাণীর হিংস্র হওয়ার কথা, যেন কেউ তাকে ঘাঁটানোর সাহস না করে। বিবর্তনবাদীদের বানানো বহু নিয়ম ভঙ্গ করে এই প্রাণীটি কোনো কারণে নিরীহ, শান্ত, মানুষের প্রতি অনুগত হয়ে গেছে। আল্লাহ যদি উটকে মানুষের জন্য উপযোগী করে না বানাতেন, তাহলে মরুভূমিতে মানুষের পক্ষে সভ্যতা গড়ে তোলা অসম্ভব হয়ে যেত। উটের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা হলো কাটা যুক্ত গাছপালা চিবানোর ক্ষমতা, যা অন্য কোনো প্রাণীর নেই। বড় বড় কাঁটাসহ ক্যাকটাস এটি সাবাড় করে দিতে পারে। অন্য কোনো প্রাণী হলে ক্যাকটাসের কাঁটার আঘাতে মাড়ি, গাল, জিভ ক্ষতবিক্ষত হয়ে যেত। কিন্তু উটের কিছুই হয় না। উটের মুখের ভেতরে এক বিস্ময়কর ব্যবস্থা রয়েছে। এর মুখের ভেতরের দিকটাতে অজস্র ছোট ছোট শক্ত আঙ্গুলের মত ব্যবস্থা রয়েছে, যা কাটার আঘাত থেকে একে রক্ষা করে। এমন এক জিভ আছে যা কাঁটা ফুটো করতে পারে না। উটের চোখে দুই স্তর পাপড়ি রয়েছে। যার কারণে মরুভূমিতে ধূলিঝড়ের মধ্যেও তা চোখ খোলা রাখতে পারে। এই বিশেষ পাপড়ির ব্যবস্থা সানগ্লাসের কাজ করে মরুভূমির প্রখর রোদের থেকে চোখকে রক্ষা করে এবং চোখের আদ্রতা ধরে রাখে। একইসাথে এটি বিশেষভাবে বাঁকা করা যেন তা ধুলোবালি আটকে দিতে পারে।

Comments

Popular posts from this blog

Goat Farming in Bangladesh || বাংলাদেশে ছাগল পালন ।। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন || Black Bengal Goat Farming

List of Web Hosting and Domain sellers in Bangladesh || বাংলাদেশী হোস্টিং ও ডোমেইন বিক্রয় কোম্পানির তালিকা

Condolence letter and reply for bangladeshi corporate office of muslim's death news ..........